ইউরোপের উত্তর-পশ্চিমের দেশ ডেনমার্ক। সরকারিভাবে এটি ‘কিংডম অফ ডেনমার্ক‘ নামে পরিচিত। ডেনমার্ক স্ক্যান্ডিনেভীয় অঞ্চলের অংশ। ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ভৌগলিকভাবে দেশটি উত্তরের স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশগুলোর সঙ্গে ইউরোপের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। দেশটির রাজধানী ও বৃহত্তম শহর কোপেনহেগেন। এ ছাড়া আরহাস ও আলব্রোগা দেশটির প্রধান দুই শহর।
ডেনমার্কের ধর্ম
ডেনমার্কের রাষ্ট্রধর্ম ইভাঞ্জেলিক্যাল লুথারান তথা লুথারীয় খ্রিস্ট ধর্ম যা দেশটির সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে। জনসংখ্যার প্রায় ৮৫ শতাংশই ইভাঞ্জেলিক্যাল লুথারান ধর্মের। ৩ শতাংশ রোমান ক্যাথলিক। দেশটিতে দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম হলো ইসলাম। মুসলিমদের সংখ্যা ৩ লাখের মতো। যা মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ।
ডেনমার্কের আয়তন ৪২ হাজার ৯২৪ বর্গকিলোমিটার। দেশটির জনসংখ্যা ৫৮ লাখ ৪০ হাজার। ডেনমার্কের রাষ্ট্রভাষা ডেনিশ। প্রায় ৫০ লাখ মানুষ এই ভাষায় কথা বলে। ডেনমার্কের বর্তমান জাতীয় পতাকা ১২১৯ সাল থেকে প্রচলিত। বিশ্বের অন্যতম ধনী ও আধুনিক রাষ্ট্র ডেনমার্ক। সবুজ ভূমি, পাহাড়, নদী ও প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ দেশটিতে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র থাকলেও সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেই দেশ পরিচালিত হয়।
ইসলাম ও মুসলিমদের আগমনের ইতিহাস
ঐতিহাসিকদের মতে, কয়েক শতক ধরেই ডেনমার্কে বসবাস করছে মুসলিমরা। মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে দেশটির প্রথম সংযোগ তৈরি হয় মধ্যযুগে। ডেনিশ ইতিহাসবেত্তা জরগেন সিমনসেনের মতে, জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মুসলিম ও সম্মিলিত খ্রিস্টান বাহিনীর মধ্যে সংঘটিত ক্রুসেড যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল ডেনমার্কের সামরিক বাহিনী।
তখন থেকেই ডেনমার্ক ইসলামের সঙ্গে পরিচিতি ঘটে। ১৮৮০ সালে পরিচালিত আদমশুমারিতে ডেনমার্কে ৮ জন মুসলিমের নাম নথিভুক্ত করা হয়। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত প্রতিটি আদমশুমারিতে মুসলিমদের সংখ্যা গণনা করা হয়েছে এবং প্রতিবারই আগের চেয়ে সংখ্যা বেড়েছে। ১৯৫০-এর দশকে মুসলিম দেশগুলো থেকে ব্যাপক অভিবাসন শুরু হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও শিল্পায়নের কারণে যুগোস্লাভিয়া, তুরস্ক, পাকিস্তান ও উত্তর আফ্রিকার মুসলিমপ্রধান দেশগুলো থেকে বিপুল সংখ্যক মুসলিম ডেনমার্কে আসে। এটাকে মুসলিম অভিবাসনের প্রথম ঢেউ বলা হয়। এ সময় দেশটিতে ইসলামের প্রসার ঘটে এবং ১৯৬৭ সালে এখানে প্রথমবারের মতো মসজিদ নির্মাণ মুসলিমরা।