আবরার ফাহাদ একদম নাই হয়ে গেল। সকাল থেকে ছেলেটার লাস হয়ে পরে থাকা ছবিটা দেখছি। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কালসিটে দাগ ভয়াবহ নির্যাতনের সাক্ষ্য বহন করছে। বোঝাই যাচ্ছে একবারে এক কোপে মারেনি। নির্মম নির্যাতন করতে করতে মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘাতকেরা থেমেছে। এত রাগ? ফাহাদকে আমি চিনি না। শুনতেছি ছেলেটি শিবির করে। আবার শুনছি শিবির করে না কিন্তু শিবির করার সন্দেহে মেরেছে। শিবির যদি করেও যদি থাকে তাতে এই মৃত্যু সিদ্ধ হয়ে যায় না। ছোট একটি বাচ্চা ছেলে। বদলানোর জন্য পুরো জীবন পরে আছে। শিবির করলেই মেরে ফেলার লাইসেন্স হাতে এসে যায়? ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মাঝে কেউ দলের নামে কেউবা ধর্মের নামে কারা ঘৃণার বীজ বপন করে যাচ্ছ? এই ছেলেটি যদি শিবির করেই থাকে এটাই কি তার শেষ অবস্থান? আমি আমার জীবনে অনেক দেখেছি। ছোটবেলা যাকে শিবির করতে দেখেছি সে পরবর্তীতে বাম করেছে বা মাঝামাঝি অন্য কিছু। আর ছোটবেলায় যে একসময় বাম সংঘটন করত সে ধর্মীয় উর্গ্রপন্থীর দল করতেও দেখেছি। অনেককে আর্থিক কারণে জামাতের সুবিধা নিতেও শুনেছি। অনেকে কেবল প্রাইভেট টিউশন পাওয়ার জন্যও শিবির করতে দেখেছি। সে যদি বেঁচে থাকতো হয়ত একদিন এইসবের উর্ধে উঠতে পারতো। যে যেটাই করুক আর যেটাই বলুক তাকে করতে বা বলতে দিলেই একটি দেশ সুন্দর হতে পারে। আর নাহলে সহমতের ভাগাড়ে পরিণত হয়।
সংবাদটি শুনার পর থেকে একটা বিষয় ভাবছিলাম। শিক্ষা মানুষের মধ্যে ভালোমন্দ বোধ তৈরি করার কথা। বিবেকবোধকে জাগ্রত করার কথা। নানা মানুষের নানা মতকে সহ্য করতে পারতে শেখার কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও একজন ছাত্র যদি তার সহপাঠীকে ফেসবুকে তার স্বাধীন মত প্রকাশের কারণে বর্বরদের মত মেরে ফেলে, তাহলে প্রশ্ন জাগে: সত্যিই কি আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো সত্যিকারের শিক্ষা দিতে পারছে? একটি ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পাঠাতে কি পরিমান কাঠখড় পোড়াতে সেটা জানে ওর বাবা মা। কত সময়, কত শ্রম কত অর্থ, কত কষ্ট আর কত পরিকল্পনার পর একটি ছেলে বুয়েটের মত একটি প্রতিষ্ঠানে EEE-র মত বিভাগে পড়তে পারে সেটা ওর বাবা মা জানে।
মৃত্যুর আগে তার লেখা শেষ পোস্টটি পড়ছিলাম। বোঝা যাচ্ছে তার মধ্যে ক্ষোভ জমতেছিল। সেই ক্ষোভের বহির্প্রকাশ তার লেখার মধ্যেও জ্বলজ্বল করছে। এই ধরণের পোস্টের কারণে যদি তাকে জীবন দিতে হয়ে থাকে সেটাতো আরো ভয়াবহ। এই ধরণের মৃত্যুর মাধ্যমে অনেকের কণ্ঠকে থামিয়ে দেওয়া হয় যা দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এইসব করে কি দেশের মঙ্গল হবে? সরকার করবে তাতে হাততালি আর না হয় চুপ করে থাকতে হবে। এর ফলে সরকার কি ভালো চলবে? সরকার যদি হয় রেল তাহলে ভিন্নমতের মানুষগুলা যেন রেল ট্র্যাক যারা সরকারকে ট্র্যাকে রাখতে সহযোগিতা করে। ঘরের মানুষগুলোর শরীরের ময়লা ও পয়ঃ নিষ্কাশনের জন্য টয়লেট লাগে রাষ্টের মানুষের ক্ষোভ নিষ্কাশনের জন্যও স্পেস দিতে হয়।
দেশকে সুস্থ ও সুন্দর রাখার জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সেই শিক্ষকরা আজ নির্লজ্জ দলবাজির কারণে প্রায় সবার মেরুদণ্ডই ভেঙে মেরুদন্ডহীন প্রাণীতে পরিণত হয়েছে। সরকারি দল করে এমন কোন শিক্ষককে দেখবেন না এই মৃত্যুর প্রতিবাদ করতে। এমন হয়েছে এখন আর কেউ সাহস করে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ায় না। বড় দুঃখের সময় পারি দিচ্ছি আমরা। এক দিকে সীমাহীন দুর্নীতি, শিক্ষার মানের অবনতি, নেশা ও জুয়ায় আসক্তি, ব্যাংক লুট, কূটনীতিতে পরাজয় তারপরও সবাই কি দারুন চুপ! মাঝেমাঝে ভাবি এরা এত স্বার্থপর যে নিজের ক্ষুদ্র লাভের তরে দেশের বৃহত্তরের লাভ চোখে দেখে না। ধিক তোমাদের!
প্রিয় ছোট ভাই আবরার, শহীদ আবরার ফাহাদ । এই দেশের শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক নেতা সরকারি আমলারা যখন ক্ষনিকের স্বার্থ হাসিলের প্রয়োজনে নিজের বিবেক বুদ্বির দরজায় তালা ঝুলিয়েছে।
ঠিক সেই সময় তুমি এই দেশের ১৭ কোটি মানুষের অধিকারের পক্ষে, সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছো।
এই দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রেতারা তোমাকে হত্যা করেছে। বুয়েটের হলের সিড়িতে তোমার লাস ফেলে রেখেছে!
এই নিউজ জানার পর থেকেই বুকে পেইন অনুভব করছি। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না!! দুই তিন জন বুয়েটিয়ানকে (ছোট ভাই) কল করলাম। কুকুররা তো এমনি। কুকুরদের সামনে থেকে এই রকম লেখা না শেয়ার করাই ভালো।
আমি আবরারের আইডি দেখে ভাবছি সবাই আফসোস করছে আবরার বেচে থাকলে অনেক বড় ইঞ্জিনিয়ার হত, সফলতার উচুতে দাড়াত!!!
কিন্তু আবরার তো সফল ই হয়ে গেল, চলে গেল সে তার মহান রবের সান্নিধ্যে। (আল্লাহ তায়ালা তার খুব কাছের বন্দাদের শাহাদাৎ দিয়ে কাছে ডেকে নেন) শাহাদাৎ বরণ করে দেশ প্রেমের এক উজ্জল বাতিঘর হিসেবে চিরস্থায়ী আসন করে নিল দুনিয়ার এই জমিনে।
আমরা যারা চুড়ি পরে নিরব রইলাম আমাদের দেখিয়ে দিল এই দেশে শহীদ নিসার আলি তিতুমীর, হাজি শরিয়তুল্লাহ, শহীদ আব্দুল মালেকের বীজ এখনো বিরাজমান।
আবরারের রক্ত ছুয়ে শপথ নিয়ে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দড়ানোই হোক আমাদের অংগিকার।
আবরার আমাদের রক্ত আজ জমাট বাধা! আমাদের মগজ আজ বরফের পিন্ড হয়ে গেছে।
আমাদের ক্ষমা করে দিও ভাই।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন শহীদ আবরারকে
কবুল করুন। আমিন