রবিন খান হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে মাজার জিয়ারত ও খালার বাসায় যাওয়ার কথা বলে স্বামী আজিজুল হাকিম রবিনকে( ২২) পরকীয়া প্রেমিকের সহায়তায় মেঘনা নদীর মোহনায় খুন করেন স্ত্রী সুইটি আক্তার বর্ষা । পাঁচ মাস পর ঘটনার রহস্য উম্মোচন করে আশুগঞ্জ থানা পুলিশ । এই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । তারা সকলেই আদালতে ঘটনার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ।
শনিবার( ২২ অক্টোবর) বিকালে আশুগঞ্জ থানা পুলিশ গ্রেফতার ও ঘটনার রহস্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন । এই ঘটনায় ভিকটিমের বাবা আলমগীর খান বাদী হয়ে ২১ অক্টোবর আশুগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ভিকটিমের স্ত্রী আশুগঞ্জ উপজেলার যাত্রাপুর সাকিনের মৃত অলফত আলীর মেয়ে সুইটি আক্তার বর্ষা( ২১), সুইটি আক্তারের প্রেমিক উপজেলার লালপুর ইউনিয়নের লামা বায়েক( আব্দুল হাটি) এলাকার জামাল হোসেনের ছেলে দিদার( ২৪), ভাড়াটে খুনি লালপুর( হোসেনপুর) চেঙ্গা মুড়া এলাকার ফুল মিয়ার ছেলে বাদল( ২৫) ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা( এসআই) মো. আনোয়ার হোসাইন গ্রেফতারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করলে আসামিরা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক আফরিন আহমেদ হ্যাপির কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন । ।
আসামিদের বরাত দিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা( এসআই) মো. আনোয়ার হোসাইন বলেন, পরকীয়া প্রেমের জের ধরে রবিনের সঙ্গে সুইটির কলহ চলছিল । সুইটি তার প্রেমিক দিদারের সঙ্গে আগে থেকেই রবিনকে মারার পরিকল্পনা করে রাখেন । রবিনকে খবর দিয়ে চলতি বছরের ২২ মে বিকালে তার নিজ বাড়ি হতে তার ২য় স্ত্রী সুইটি আক্তারের যাত্রাপুরের বাড়িতে আনা হয় । রবিন খান তার ২য় স্ত্রী সুইটির বাড়িতে যাওয়ার পর থেকেই তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায় । এ বিষয়ে আশুগঞ্জ থানায় একটি নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরি করা হয় ।
পরিকল্পনা অনুযায়ী সুইটির প্রেমিক দিদার দুইজন ভাড়াটে খুনি প্রস্তুত রাখে । সুইটি কৌশৈলে ২৩ মে নবীনগর মাজার জিয়ারত ও সুইটির খালার বাসায় বেড়ানোর কথা বলে লালপুর বাজারে নৌঘাটে যায় । সেখানে আগে থেকে দিদারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ভাড়াটে খুনি একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা এবং দিদারের কেনা মিষ্টিতে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে রাখেন । এই সময়ে ভিকটিম রবিন ও তার ২য় স্ত্রী সুইটি লালপুর নৌঘাটে পৌঁছলে রবিন খান ও বর্ষা এবং বর্ষার প্রেমিক দিদার, ভাড়াটে খুনি বাদলসহ অপরজন ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে নবীনগর উদ্দেশ্যে রওনা করে । কিছু সময় নৌকা চলার পর নদীর মাঝখানে গেলে আসামি দিদার ভিকটিম রবিন খানকে মিষ্টি খাওয়ার প্রস্তাব দেয় । রবিন খান মিষ্টি না খেয়ে তাদের সাথে থাকা একটি কলা খায় । রবিন খান নৌকার পেছনে ইঞ্জিনের কাছে গেলে দিদারের নির্দেশে নৌকার মাঝি নৌকার স্টার্ট বন্ধ করে দেয় । তখন ভাড়াটে খুনি বাদল মিয়া তার কোমড়ে রাখা নৌকার ইঞ্জিন ষ্টার্ট দেয়ার হেন্ডেল দিয়ে রবিন খানের মাথায় একাধিক আঘাত করলে রবিন খান পড়ে যায় । নৌকায় থাকা সকলে মিলে রবিনের লাশ গুম করতে ইট দিয়ে বেধে লাশ পানিতে থাকা একটি খুঁটিতে বেধে রাখেন ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা( এসআই) মো. আনোয়ার হোসাইন বলেন, একসপ্তাহ আগে মামলাটি আমি তদন্তভার পাই । ঘটনার ৫ মাস পর প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে সুইটি আক্তার বর্ষা, পরকীয়া প্রেমিক দিদার ও ভাড়াটে খুনি বাদলকে গ্রেফতার করে করা হয় । গ্রেফতারকৃতরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূরক জবানবন্দি দিয়েছেন । হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত ইঞ্জিন চালিত নৌকা, নৌকার মাঝিকে সনাক্ত করে ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে ।
এ বিষয়ে আজিজুল হাকিম রবিনের বাবা মো. আলমগীর খান বলেন, আমার ছেলের লাশটা দেখতে পারি নাই । জানাজাটাও পড়তে পারি নাই । এমন নিষ্ঠুরভাবে আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে যারা হত্যা করেছে তাদের প্রত্যেকের আমি ফাঁসি চাই । পাশাপাশি মামলাটি দ্রুত বিচারের আওতায় নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি সরকারের কাছে ।
Source Al Mamun ভাই